বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:লকডাউনের আগে গত বছরই পূর্ণ করেছিলেন শতবর্ষ। অনুষ্ঠান করেও সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল কিংবদন্তী নৃত্যশিল্পীকে। এর পর গত জুন মাসে ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনিদের সঙ্গে তাঁর জন্মদিন পালিত হয়। তার পর এক মাসও কাটল না। করোনা–সময়ে গোটা পৃথিবী যখন বিভ্রান্ত, ব্যতিব্যস্ত, ঠিক তখনই অনেকটাই নীরবে চলে গেলেন বাংলার সংস্কৃতি জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র অমলাশংকর। তাঁর মৃত্যুর পর শিল্পীকন্যা মমতাশংকর বলেছেন, ‘মা ঠিক যে ভাবে চেয়েছিলেন, সেই ভাবেই চলে গেলেন। কাউকে কোনও রকম বিব্রত করেননি।’ তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার কলকাতায় নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অমলাশংকর। বয়স হয়েছিল ১০১ বছর। তাঁর মৃত্যুর কথা প্রথম জানান অমলাশংকরের নাতনি শ্রীনন্দাশংকর। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘আজ আমার ঠাম্মা ১০১ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।’ অমলাশংকরের কথা বলতে গিয়ে মমতাশংকর বলেছেন, ‘মা ঘুমোচ্ছিলেন। ভালোই ঘুম হয়েছিল তাঁর। সেই ঘুমের মধ্যেই চলে গেলেন। মা সবসময় বলতেন, ‘আমাকে নিয়ে কাউকে যেন ব্যস্ত হতে না হয়। আমি যেন হাসতে হাসতে চলে যেতে পারি।’ বলা বাহুল্য, তাঁর আশাই পূর্ণ হয়েছে। এর পরই মমতাশংকর লিখেছেন, ‘এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তিনি নেই। শেষ যাত্রার আগে মাকে যখন শাড়ি পরানো হচ্ছিল, তখনও মনে হচ্ছিল, মা যেন আমাদের পাশেই রয়েছেন।’
তাঁর জন্ম ১৯১৯ সালে। মাত্র ১১ বছর বয়সেই তিনি প্যারিসে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই উদয়শংকরের সঙ্গে যোগাযোগ এবং শিল্পসাধনা অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। ব্যক্তিগত জীবনে ভারতীয় নৃত্যশিল্পে প্রবাদপুরুষ উদয়শংকরের স্ত্রী ছিলেন। ছেলে আনন্দশংকর এবং মেয়ে মমতাশংকরের নামও ভারতীয় নৃত্যশিল্পে যথেষ্ট শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে থাকে। ভারতীয় তথা আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন সঙ্গীতশিল্পী রবিশংকরের ভ্রাতৃবধূ ছিলেন তিনি। অমলাশংকর সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। ১৯৪৮ সালে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘কল্পনা’। ছবিটির কাহিনি, সহ–প্রযোজনা এবং পরিচালনা করেছিলেন উদয়শংকর। এই সিনেমায় তিনি উমার চরিত্রে অভিনয় করেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি দেখানো হয়েছিল। সর্বকনিষ্ঠ শিল্পী হিসেবে সেই উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এর পর ২০১২ সালেও একবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। স্মৃতিচারণ করেছিলেন সেই ঘটনার। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
তাঁর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর সিঙ্গাপুর থেকে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘অমলাশংকরের ‘সামান্য ক্ষতি’ পরিবেশনা দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, কথায় বলে তার ব্যাখ্যা করতে পারব না। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই শিল্পী। আমাদের সবার কাছেই তাঁর প্রতিভাকে বিস্ময় বলা যায়। একই জীবনে অনেক ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন। অসাধারণ জীবনযাপনও করেছেন।’ অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ভারতীয় নৃত্যশিল্পে অমলাশংকরের মতো শিল্পীর অবদান কোনও দিন ভোলা যাবে না। তাঁর চলে যাওয়াটা ভারতীয় শিল্পজগতে একটা অপূরণীয় ক্ষতি।’ বাংলার সংস্কৃতি জগতের বহু মানুষই তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন।